:

আট হাজার কোটি টাকার সুফল পায়নি চট্টগ্রামবাসী : সড়কে চলছে নৌকা!!

top-news

আট হাজার কোটি টাকা খরচের পরও জলাবদ্ধতায় সুফল মিলছে না চট্টগ্রামে। বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরী। চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৭সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র নেয়া  প্রকল্পে ৫হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২০সাল।কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং সড়কে যানবাহনের পরিবর্তে বৃষ্টি হলে চলাচল করে নৌকা! 

এরপর সিডিএ কর্ণফুলীর নদীর তীর ঘেষে বাঁধসহ রাস্তা নির্মাণ, পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাষণ উন্নয়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বাড়ৈপাড়া এলাকায় দুই দশমিক ৯ কিলোমিটার খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করে। এরমধ্যে ২০১৭সালে সিডিএ’র নেয়া প্রকল্পটির কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হয়। এতে সবক’টি প্রকল্প মিলে ব্যায় দাঁড়ায় ১৪হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।

নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালে শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬টি খাল নিয়ে গৃহীত প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। সেটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। পরে মেয়াদের সাথে বেড়েছে খরচও। প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬সালের জুনে। 
প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১৭৬ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ, ৪৫টি সেতু, ৬টি কালভার্ট, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ, পাঁচটি রেগুলেটর নির্মাণ, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটর নতুন নালা, ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার খালের পাশে সড়ক নির্মাণ ও ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নালা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেড। 

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর অধীনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/ জলাবদ্ধতা  নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ নামে নেয়া আরেকটি প্রকল্পটির খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বিভিন্ন খালের সাথে যুক্ত ২৩টি স্লুইস গেইট নির্মাণ করার কথা।

সিডিএ’র ২০১৭ সালে নেয়া জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সাথে কর্ণফুলী নদীর তীরে বাঁধসহ রাস্তা নির্মাণে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার আরো একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় খালের মুখে ১২টি স্লুইস গেইট নির্মাণ কাজ রয়েছে। এরমধ্যে আছে চাক্তাই ও রাজাখালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাল।
এসব প্রকল্পের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত দুই দশমিক নয় কিলোমিটার দীর্ঘ বাড়ইপাড়া খাল খননের প্রকল্প নেয়। এর ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

 এসব প্রকল্পে ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এত টাকা খরচের পরও নগরবাসী এর সুফল পায়নি। জলাবদ্ধতা সমস্যা রয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় নগর। 

২০২১ সালের জুনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প তদারককারী প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ণ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সিডিএর প্রকল্পটি নিয়ে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এত বড় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনটিও সঠিকভাবে করা হয়নি। যেটি করা হয়েছে, সেটিও অনেক ত্রুটিপূর্ণ। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে অর্থবছরভিত্তিক আর্থিক ও বাস্তব কর্মপরিকল্পনাও ছিল না সিডিএর। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়েছে। এখন ব্যয় ও সময় দুটিই বাড়ছে।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় এরমধ্যে চট্টগ্রামে গত ১০ বছরে খাল-নালায় পড়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যু হয়েছে সিটি করপোরেশনের খাল ও নালা এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প এলাকায়। এসব মৃত্যুর একটিতেও তদন্ত কমিটি করেনি সরকারি দুই সংস্থা। অপ্রত্যাশিত এসব মৃত্যুর জন্য কারও বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও হাইকোর্টের নির্দেশে দুটি তদন্ত কমিটি হলেও সেখানে কেউ দায় স্বীকার করেনি।

ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে ভোগান্তি যেমন বাড়ছে তেমনি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে নগরবাসীর জন্য। দ্রুত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের মধ্যমে জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা এবং অপ্রত্যাশিত মৃত্য বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি নগরবাসীর।#

https://newspluse24.com/public/uploads/images/manualAds/maanmanualAds02022025_111955_adds.jpg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *