শিশু সেহরিশ মারা যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 29 Jul, 2025
প্রায় সাড়ে তিন মাস পর চট্টগ্রামের কাপাসগোলায় নালায় পড়ে ৬মাস বয়সী শিশু সেহরিশ মারা যাওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রতিবেদনে নালায় পড়ে ওই শিশু মারা যাওয়ার বিষয়ে ৮টি কারণ চিহিৃত করে স্বল্প,দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে রিকশাচালকের অদক্ষতা, খাল গুলিকে অরিক্ষত রাখা, সংকীর্ণ ও অপ্রশস্থ সড়ক ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানকে চিহ্নিত করে না রাখা, অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত,খাল বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়াসহ সেবা সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা, গাফিলতি ও সমন্বয়হীনতার কথা বলা হয়েছে। কিন্ত ওই ঘটনার ঠিক
গত ৯ জুলাই হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় নালায় পড়ে মৃত্যু হয় তিনি বছর বয়সী আরো এক শিশুর। প্রতিবেদনে ওই শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি।
সোমবার সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন করপোরেশনের সচিব ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক মো. আশরাফুল আমিন। কমিটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্থপতি, নগরপরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থার কর্মকর্তারা ছিলেন।
গত ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের কাপাসগোলা এলাকায় নবাব হোটেলের পাশের সড়কে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশে হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশায় ছিল সেহরিশ, তার মা ও দাদি। তারা প্রাণে বাঁচলেও প্রবল ¯্রােতে তলিয়ে যায় সেহরিশ। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর ১৯ এপ্রিল সকালে শিশুটিকে স্থানীয়দের সহায়তায় চাক্তাই খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনা তদন্তে গত ২২ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এঘটনার ঠিক তিন মাস পর গত ৯ জুলাই হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় নালায় পড়ে মৃত্যু হয় তিনি বছর বয়সী আরো এক শিশুর।
প্রতিবেদনে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ৮ বছরে নালায় পড়ে ১৭ জন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা এবং যথাযথ ভাবে উদ্ধার কার্যক্রম না হওয়ায় নালায় পড়ে হতাহতের ঘটনা বাড়ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
১৯৯৫ সালে ইউএনডিপি এবং ইউএনএইচআর এর সহযোগিতায় সিডিএ’র প্রণীত ১৫ বছর মেয়াদী ড্রেনেজ মাষ্টারপ্ল্যান বাস্তায়বায়ন না করায় দায় সিটি কর্পোরেশনের বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অপরিকল্পিত নাগরায়নসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ এবং চটগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাকে দায়ি করা হয়। এছাড়া বর্ষায় জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধ্বস এবং নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনাকে প্রধান সমস্যা হিসাবে চিহিৃত করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণার উদ্বৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সেবা সংস্থা ওয়াসা,বিটিসিএল এবং কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানীর পাইপের কারনে ১৩২পাইপলাইনের কারণে আবর্জনা জমে জলাবদ্ধতার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া একসময় ৪১টি ওয়ার্ডে ১হাজার ৩৫২টি পুকুর ও জলাশয় থাকলেও প্রতিবছর ১০শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া পাহাড়ধ্বসের বিষয়টি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
ভবিষ্যতে নালা -নর্দমায় পড়ে যাতে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটে সেজন্য মেয়রের নেতৃত্বে বিভাগীয় কমিশনার, বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিডিএ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম ওয়াসা,পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অনান্য সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয়ে মনিটরি সেল করা, কুইক রেসপন্স টিম গঠনসহ হট লাইন চালু, নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপনসহ স্ল্যাব স্থাপনসহ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনায়, ২০জন নগর পরিকল্পনাবিদকে দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব নগর পরিকল্পনা ইউনিটকে সমৃদ্ধকরণ করা, পুকুর সংরক্ষণ, জলাধার আইন এবং সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ জনসচেতনতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় নগরীর খালগুলিকে জলপথ হিসাবে ব্যবহার করা, খালে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করা, পাহাড়ে সিল ট্রাপ তৈরি করা, ফুটপাতে ঢালাই স্ল্যাব স্থাপনসহ ফুটপাতে নালার গভীরতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় নগরীর সামগ্রীক কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নগর সরকার বা সিটি গর্ভানমেন্ট বাস্তাবায়ন, খাল-সড়ক-আবাসন-জলাশয় নিয়ে সমন্বিত মাষ্টারপ্ল্যান তৈরি, আরএস সিট অনুযায়ী চট্টগ্রামের ৭২টি খাল পুনরুদ্ধার, ৪০টি খালের মুখে বসানো রেগুলেটর পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ,প্রতিবছর খালগুলি সার্ভে করা, ফুটপাত সংস্কার, পাহাড়কাটা বন্ধ করা, জলাশয়-পুকুর ভারট বন্ধ করাসহ খালের পাশে অস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপনসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়।
২৮ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধারা বিভিন্ন সুপারিশ করা হলেও নালায় পড়ে ১৭জনের যে মৃত্যু হয়েছে তার দায় কোন সংস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। নালায় পড়ে একের পর এক মৃত্যুর যে ঘটনা ঘটছে এ জন্য কোন ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বলা যায়, ধান ভানতে শিবের গীত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়,
অনেক কথা যাও যে ব’লে কোনো কথা না বলি। তােমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি॥
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
