:

যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ভূমি নিয়ে দর কষাকষি: ইউক্রেনের কতটুকু ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে?

top-news

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার আলাস্কায় এক শীর্ষ সম্মেলনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন। ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ শেষ করতে হলে মস্কো এবং কিয়েভ উভয়কেই কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে।

এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে, রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো:

রাশিয়ার দাবি

রাশিয়া বলছে, ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন এখন রাশিয়ার অংশ। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সময় এই অঞ্চলগুলো ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল।

তবে ইউক্রেন বারবার বলেছে যে তারা রাশিয়ার কোনো ভূমি দখল মেনে নেবে না। বেশিরভাগ দেশই ১৯৯১ সালের সীমানা অনুযায়ী ইউক্রেনের ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দেয়।

ক্রিমিয়া

২০১৪ সালে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দক্ষিণের কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর একটি বিতর্কিত গণভোটের পর মস্কো এই অঞ্চলটিকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এই অঞ্চলের আয়তন প্রায় ২৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার।

রাশিয়া মনে করে ক্রিমিয়া আইনত তাদের অংশ। অন্যদিকে, ইউক্রেনের অবস্থান হলো ক্রিমিয়া তাদেরই অংশ, যদিও কিছু ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেন যে শক্তি প্রয়োগ করে ক্রিমিয়াকে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন হবে।

দোনবাস

রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাস অঞ্চলের প্রায় ৮৮ শতাংশ বা ৪৬,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় পুরোটাই এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ রয়েছে।

প্রায় ৬,৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে দোনেৎস্কের সম্মুখভাগে রাশিয়া তাদের বেশিরভাগ শক্তি কেন্দ্রীভূত করছে, এবং তারা শেষ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

২০১৪ সালে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেন সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেদের আলাদা করে "পিপলস রিপাবলিক" হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের মাত্র কয়েক দিন আগে, ২০২২ সালে পুতিন তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন


রাশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন অঞ্চলের প্রায় ৭৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৪১,১৭৬ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে প্রায় ১৪,৫০০ বর্গ কিলোমিটার।

২০২৪ সালে পুতিন বলেছিলেন যে তিনি শান্তি চুক্তিতে রাজি হবেন যদি ইউক্রেন রাশিয়ার দাবিকৃত কিন্তু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন সমস্ত অঞ্চল থেকে সরে আসে - বর্তমানে এই এলাকার পরিমাণ প্রায় ২১,০০০ বর্গ কিলোমিটার। একইসাথে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে ত্যাগ করতে হবে।

খালিভ, সুমি, এবং দনিপ্রোপেট্রোভস্ক

রাশিয়া খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ এবং দনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট কিছু অংশও নিয়ন্ত্রণ করে। সুমি এবং খারকিভ অঞ্চল জুড়ে রাশিয়ার দখলে আছে প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। দনিপ্রোপেট্রোভস্কে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে একটি ক্ষুদ্র এলাকা রয়েছে।

রাশিয়া বলেছে যে তারা ইউক্রেনের আক্রমণ থেকে নিজেদের কুর্স্ক অঞ্চলকে রক্ষা করার জন্য সুমিতে একটি বাফার জোন তৈরি করছে।

অঞ্চলগুলোর আইনি মর্যাদা


মস্কো ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্র, সেভাস্তোপল, লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক, দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ান ফেডারেশনের অধীন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। কিয়েভ অবশ্য এই অঞ্চলগুলোকে ইউক্রেনের অংশ বলে মনে করে।

বেশিরভাগ দেশ এই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, তবে কিছু দেশ দেয়। সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং নিকারাগুয়া ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং রাশিয়ার এই দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিল ১১টি দেশ।

https://newspluse24.com/public/uploads/images/manualAds/maanmanualAds02022025_111955_adds.jpg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *