পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য ভূখণ্ড: ১৮ কোটি মানুষের সমান অধিকার রয়েছে

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 19 Jul, 2025
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য ভূখণ্ড। এই ১৮ কোটি মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। তাই এই ভূখণ্ডের সম্ভাবনা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের সকল মানুষকে সচেতন ও সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
আজ শনিবার (১৯ জুলাই) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট হলে আয়োজিত “বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: সচেতনতা ও সম্প্রীতি” শীর্ষক সেমিনারে আলোচকগণ এ কথা বলেন। ঢাকাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে পপ্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘মানুষের জীবনের জন্য তার সংস্কৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন সংস্কৃতিতে আঘাত আসে, তখন তা জীবনকেও প্রভাবিত করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইস্যুর সাথে এই সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আজকের এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এই সেমিনারটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং জাতিগত সম্প্রীতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণে আমরা বাংলাদেশী। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ইঞ্চি মাটি আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও তার সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের আলাদা করে চিন্তা করতে হবে। আদিবাসী বা উপজাতি নয় আমাদের সকলকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় গর্বিত হতে হবে।
রাবির সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আব্দুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠীদের ভাষা, সংস্কৃতি সবকিছুই সাধারণ বাঙালিদের থেকে আলাদা। আমি আশা করবো, পার্বত্য অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীদের সাথে মিলেমিশে সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন মণ্ডল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ। সেখানে কি নেই? প্রাকৃতিক সম্পদ সৌন্দর্য সব কিছুতেই পরিপূর্ণ। কিন্তু এর সৌন্দর্য সম্পদের কারণে এটি প্রতিবেশী দেশের লোলুপ দৃষ্টিতে পড়েছে। আমাদের জাতীয়তাবাদেই তো ভুল। ভাষার ওপর কোনো জাতি প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। জাতি তৈরি হয় ভুখন্ডের ওপর নির্ভর করে। যারা পাহাড়ে বাস করে তাদের পাহাড়ি বললে তাদের অবহেলা করা হচ্ছে বলে তাদের মনে হতে পারে। সমতল কিংবা পাহাড়ে অবস্থানরত মানুষ সবাই আমরা বাংলাদেশি তাই তাদের কোনভাবে অবহেলা করা যাবে না। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ রাজনৈতিক বিরোধের কারণে আমরা কোন বৈষম্যের সৃষ্টি না করি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. শাহাব এনাম খান বলেন, আমরা দেখেছি, দীর্ঘদিন ধরেই এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীরা বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, এমনকি নাগরিক অধিকার ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে রয়েছে। এই বৈষম্য শুধু প্রশাসনিক বা অর্থনৈতিক নয়, বরং অনেক সময় এটি সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাব ফেলে। এ সংকটের সমাধানে কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, দরকার একটি "ন্যাশনাল ন্যারেটিভ"—যেখানে সকল জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, অধিকার ও মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
স্বাগত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম রিসার্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সবাই কথা বলেন, সেন্টমার্টিন এর পর্যটন বন্ধ হওয়ায় এর প্রতিবাদে সবাই সোচ্চার হয়েছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভূখণ্ড হওয়া সত্ত্বেও আমরা জাতীয়ভাবে এ ব্যাপারে অসচেতন ও উদাসীন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তাই জাতি হিসেবে আমাদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে এবং সুত্রা থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে আজকে আমাদের এই আয়োজন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল ডক্টর নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ আজ যে আদিবাসী দাবী করছে , এর পেছনে রয়েছে এক রাষ্ট্রঘাতী ষড়যন্ত্র। সেখানে ছয়টি সন্ত্রাসী গ্রুপ আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে সারা দেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। সেই দিক থেকে এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. তারেক ফজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সিএইচ টি রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক সরদার আব্দুর রহমান। পর্যালোচক প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন মণ্ডল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. শাহাব এনাম খান, রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জনাব মো. আবুল কাসেম, ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার জনাব আনেয়ার হোসেন, রাজশাহী মহানগরের এনসিপির আহ্বায়ক জনাব মোবাশ্বের আলী।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. এ.এন.এম. নজরুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স মেজর জেনারেল (অব.) ড. নঈম আশরাফ চৌধুরী, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুরশিদা ফেরদৌস, ফোকলোর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ব্যারিস্টার জনাব তৌফিক রহমান লাভলু, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইবনে রহমত। এছাড়াও সঞ্চালনায় ছিলেন: কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
