হাজার কোটি টাকায় চীনের তৈরি জাহাজ কেনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানী থেকে

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 13 Aug, 2025
প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির কাছ থেকে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কিনছে সরকার। জাহাজগুলো কেনা হচ্ছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জন্য। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ১২আগষ্টের সভায় অনুমোদনও দিয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের হলেও জাহাজ দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে চীনে। সেখান থেকেই পাঠানো হবে বাংলাদেশে।
৫৩ বছর আগে যাত্রা শুরু করা বিএসসি’র বহরে জাহাজ ছিল দুইটি। পরে বিভিন্ন সময় আরো ৪৪টি জাহাজ যুক্ত হয়। এসব জাহাজ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ৩৬টিকে অবসরে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালে চীনের কাছ থেকে ছয়টি জাহাজ কেনা হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় আটটিতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অগ্নিকা-ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’। পরে এ দুটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় পাঁচটিতে।
১২ আগষ্ট ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জাহাজ কেনার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বৈঠকতিতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
নতুন যে দুটি জাহজা কেনা হচ্ছে তার একটির সক্ষমতা ৫৫-৬৬ হাজার টন এবং অপর একটির সক্ষমতা ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টন। এরমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ায় তিনটি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে দুটি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির (টিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির কাছ থেকে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার ডলারে জাহাজ দুটি কেনার সিদান্ত হয়। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। জাহাজ দুইটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নেই কেনা হচ্ছে ।
এদিকে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির জন্য আরো তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে আরো ছয়টি জাহাজ কেনার বিষয়েও প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বিএসসির পরিচালনা পর্ষদ। আগামি ৫ বছরে বিএসসি’র বহরে ২২জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাহাজগুলো কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিএসসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ডিপিপি প্রণয়ন ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে ঋণ দেয়া হতে পারে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার মতো।
বিএসসি সুত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ২৭৪ কোটি টাকা আয় করে। এতে নিট মুনাফা হয় ৭২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৪৮৮ কোটি টাকা। এতে বিএসসি মুনাফা করেছে ২৫০ কোটি টাকা। মুলত: বিশ^ব্যাপী সমুদ্র পরিবহণ বেড়ে যাওয়া জাহাজ ব্যবসায় সুবাতাস বইছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যে ছয়টি কন্টেইনার জাহাজ কেনা সংক্রান্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইডিসিএফ ও বিএসসির মধ্যে একটি কনসেপ্ট পেপার স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার অধীনে ইডিসিএফ এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে। তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে।
এদিকে চীনা জাহাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসির ব্যবসার পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। দেশটির কাছ থেকে নতুন করে আরো চারটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্ত। এর মধ্যে দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার ও দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার। ব্যয় হবে ২৪ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা ঋণ হিসেবে মিলবে চীনের কাছ থেকে।
বিএসসির কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ভয়ে চীনের তৈরি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব বন্দরে বিনা বাধায় চলাচল করতে পারবে।
নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, ‘পুরোপুরি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাহাজ দুটি কেনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো ঋণ নেয়া হয়নি, বরং বিএসসির নিজস্ব তহবিল থেকেই জাহাজ কেনার টাকা দেয়া হচ্ছে। জাহাজ দুটি অ্যারোডাইনামিক ও ডুয়েল ফুয়েল সম্পন্ন। অন্যান্য জাহাজের তুলনায় এগুলোর গতিও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ নিয়ে সমঝোতার অংশ হিসেবে দেশটির কোম্পানির কাছ থেকে জাহাজ কেনা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্œের জবাবে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্যারিফ ঘোষণার আরো আগে থেকেই এ জাহাজ কেনার বিষয়ে কথা হচ্ছিল। তাই এর সঙ্গে ট্যারিফ ইস্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। যে কোম্পানির কাছ থেকে জাহাজ কেনা হচ্ছে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু জাহাজ দুটি তৈরি করা হচ্ছে চীনের ডকইয়ার্ডে।’
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
